গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কতদিন পর বোঝা যায়। গর্ভবতী হওয়ার ১০টি লক্ষণ

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কতদিন পর বোঝা যায়: আপনি কি গর্ভবতী?সাধারণত কিছু লক্ষণ এবং উপসর্গের উপর ভিত্তি করে এটি নির্নয় করা হয়।একজন মহিলার পিরিয়ড মিস হওয়াই গর্ভধারণের লক্ষণ হিসেবে মনে করা হয়।গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে তেমন সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। সাধারণত গর্ভধারণের ১ মাসের ভিতরে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ যায় না যে সে গর্ভবতী হয়েছে।কমপক্ষে ৬ সপ্তাহর আগে গর্ভবতী হওয়ার কোনো সুনির্দিষ্ট কিছু বুজা যায় না। তাই আজকের আয়োজনে থাকছে গর্ভধারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যঃ

প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ

০১.মাসিক মিস হওয়া

মাসিক মিস হওয়া গর্ভবতীর লক্ষণ।মাসিক মিস হওয়ার প্রথম দিনেই জানতে পারবেন আপনি গর্ভবতী কিনা।তবে প্রসাবের হরমোনের ঘাটতির কারনে অনেক সময় গর্ভবতী থাকা সত্বেও বুজা যায় না। তাই প্রসাব পরিক্ষা নেগেটিভ হলে আবার কিছুদিন পর পরিক্ষা করে দেখবেন।

০২.শারীরিক তাপমাত্রা

শরীরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকাটা কিন্তু গর্ভবতীর লক্ষণ।এক্ষেত্রে আপনাকে নিয়মিত তাপমাত্রার একটি নিয়মিত চার্ট করতে হবে।চার্টে শেষ ১৮ দিনের শরীরের তাপমাত্রা লিখবেন।যদি দেখেন শেষ ১৮ দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি তাহলে বুজবেন এটা প্রেগন্যান্ট এর লক্ষণ।

০৩.ঘন ঘন প্রস্রাব

গর্ভবতী হওয়ার আরেকটি লক্ষণ হলো ঘন ঘন প্রস্রাব।কারন এই সমস্যা গর্ভবতী মহিলার হরমোনের পরিবর্তনের কারনে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়।আর এই কারনে প্রস্রাবের বেগ হয়।তব এই সমস্যাটা ৬ সপ্তাহের আগে দেখা যায় না।৬ সপ্তাহ পর এই সমস্যার লক্ষণ শুরু হয়ে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পরেও থাকে।সাধারণত বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর প্রস্রাবের লক্ষণ বেশি দেখা দেয়।

০৪.হঠাৎ মেজাজ খারাপ হওয়া

গর্ভবতী মহিলার মেজাজ অস্বাভাবিক থাকাটাই স্বাভাবিক। কারন এই সময় সম্ভাব্য মায়ের শরীরে হরমোন বদলের কারনে ব্রেনের নিউরোট্রান্সমিটার পরিমাণের পরিবর্তন আসে।আর এই পরিবর্তনের কারনেই মায়ের খিটখিটে মেজাজ হয়। এই জন্য টেনশন করার কোনো প্রয়োজন নেই।

০৫. বমি বমি ভাব হওয়া

বমি বমি ভাব কিন্তু গর্ভবতী মায়ের একটি সমস্যা। এই লক্ষণটার সাথে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত।এই লক্ষণটি ১ মাসের আগে দেখা যায় না।তবে কিছু কিছু মায়ের বেলায় এটার ভিন্নতাও দেখা যায়। কারো কারো ২-৩ সপ্তাহের ভিতরে এই লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়।

০৬. স্তনের পরিবর্তন

গর্ভধারণের পর শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারনে শরীরে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায় তার মধ্যে স্তনের পরিবর্তন অন্যতম।এই সময় স্তন যুগল বেশ স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে।

এই সময় স্তন অনেক ফুলে যায় এবং ব্যাথা করে।এটা একবারে মাসিক পূর্ববর্তী  অবস্থার মত। তবে ব্যাথা যুক্ত অবস্থা বেশিদিন থাকে না।

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়

০৭. অবসন্নবোধ;

গর্ভবতী অবস্থায় শরীর অনেক দ্রুর্বল থাকে।এই সময় আচমকা ক্লান্তবোধ হবে।এই রকম শরীরের দুর্বলতা এবং ঘুম ঘুম আসার কারন হলো প্রোজেস্টেরন হরমোন।কারন গর্ভবস্থায় প্রোজেস্টেরনের হরমোনের ক্রমবর্ধমান প্রবাহ আপনাকে ক্লান্ত করার পাশাপাশি হঠাৎ করে ঘুম ঘুম ভাব দিবে।

০৮. পেট ফুলে যাওয়া

পেট ফুলে যাওয়াও কিন্তু গর্ভবতী লক্ষণ।গর্ভবতী সম্ভাবনা মায়ের হরমোনের পরিবর্তনের কারনে পেট ফুলে যায়।এই সময় আপনার এমন অনুভুতি হবে যে, পরিধেয় বস্তু কোমরের কাছে ছোট হয়ে গেছে।

০৯.স্পটিং সাদা স্রাব

সাধারণত সহবাসের সময় নিষিক্ত ডিম্বানু নিজেকে জরায়ুর সাথে জরিয়ে নেয়।যার কারনে সামান্য পরিমাণে রক্ত পড়া থেকে শুরু করে মাসিকের ব্যাথার মতো ব্যাখা হতে পারে।

এছাড়াও এই সময়ে সাদা স্রাবও দেখতে পারেন।মূলত ডিম্বানু নিষিক্ত হওয়ার পরে যোনির অভ্যন্তরে পরিবর্তনের কারনে এমনটা হয়।

তবে একটা বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিত, সেটি হলো সাদা স্রাবে গন্ধ বা যোনিতে জ্বালাপোড়া ও চুলকালে বুজবেন ব্যাক্টেরিয়া আক্রমণ হয়েছে।

১০.খাবারে অনীহা

গর্ববস্থার শুরুর দিকে খাবারের প্রতি অনিহা থাকাটা স্বাভাবিক। এই সময়ে আপনার পছন্দের খাবার থেকে শুরু করে কোনো খাবার খেতেই স্বাদ পাবেন না।এটা মূলত শরীরে ক্রমবর্ধমান ইস্ট্রোজেন সমস্যা। এই সমস্যার জন্য আশ্চর্য হবার কিছু নেই।

  • People also ask
  • গর্ভাবস্থায় কি কি লক্ষণ দেখা দেয়?
  • গর্ভবতী হওয়ার পর কি সাদাস্রাব হয়?
  • মাসিকের কত দিন পর সহবাস করা উচিত?
  • গর্ভাবস্থার লক্ষণ কতদিন পর প্রকাশ পায়

বাসায় বসে প্রেগনেন্সি টেস্ট

বাসায় বসে আপনি খুব সহজেই প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারবেন। এই জন্য আপনাকে পাড়ার যে কোনো ফার্মেসী থেকে টেস্টকীট সংগ্রহ করতে হবে। এই কীটগুলো মূলত প্রস্রাবের প্রেগন্সি হরমোনগুলোর উপস্থিতি সনাক্ত করে।

কিট ব্যবহারে নিচের কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত 

  • প্রথমতো কিটের গায়ে লেখা নির্দেশনা ভালোভাবে পড়তে হবে।
  • নিয়ম অনুযায়ী মাসিক মিস হওয়ার কমপক্ষে ১ সপ্তাহ পর পরিক্ষা করতে হয়।
  • পরিক্ষা করার পর যদি মনে করেন নেতিবাচক ফল আসে নাই তাহলে আবার পরিক্ষা করতে পারেন।
  • ইতিবাচক ফলাফল পেলে ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে কথা বলে রক্ত পরিক্ষার মাধ্যমে সঠিক তথ্য জানুন।

রক্ত পরিক্ষার মাধ্যমে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ পরিক্ষা

রক্ত পরিক্ষার মাধ্যমে প্রেগনেন্সি টেস্ট সব থেকে নির্ভরযোগ্য। গর্ভধারণের খুব প্রাথমিক সময় থেকে রক্ত পরিক্ষার মাধ্যমে সঠিক তথ্য নিশ্চিত করা যায়। তাই আপনি চাইলে রক্ত পরিক্ষার মাধ্যমে প্রেগনেন্সি চেক করতে পারেন।

গর্ভকালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যা

মাতৃকালীন সময়ে স্বাস্থ্য পরিচর্যার গুরুত্ব অনেক।মাতৃকালীন স্বাস্থ্য বলতে আমরা বুজি গর্ভাবস্থা, প্রসবকালীন এবং প্রসবোত্তর সময়ের মহিলাদের স্বাস্থ্যকে।গর্ভাবস্থায় ডায়েট আপনার সাধারণ স্বাস্থ্যকর খাদ্যের মতোই উচিত।গর্ভের শিশুর বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন ৩৪০-৪৫০ ক্যালরির বেশি গ্রহণ করা উচিত।

গর্ভাবস্থায় যে খাবারগুলো ডায়েটে রাখা উচিত

গর্ভাবস্থায় কিছু খাবার ডায়েটে রাখা উচিত। যেমন

  • জটিল শর্করা।
  • শাক-সবজি ও ফলমূল।
  • স্বাস্থ্যকর চর্বি।
  • প্রোটিন
  • শস্য ও লিগিউমস
  • তরল এবং আয়রন জাতীয় খাবার।

আপনি যদি আগে থেকেই স্বাস্থ্যকর খাবার খান তাহলে আপনার খাবার ডায়েটে কিছু পরিবর্তন করতে হবে।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ভিটামিন খনিজ

একজন সাধারণ মহিলার চাইতে গর্ভবতী মহিলার ভিটামিনের চাহিদা বেশি। এই জন্য  ডাক্তার গর্ভবতী মায়েদের ফলিক এসিড এবং আয়রন জাতীয় খাবার দেয়। এছাড়াও ফলিক এসিড এবং আয়রনের বেশি সমস্যা থাকলে এই জাতীয় ঔষধও সাজেস্ট করে।

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম

নিজেকে ফিট,আরামদায়ক রাখতে যোগব্যায়াম করা উচিত। কারন যোগ ব্যায়াম শরীরকে স্থির রাখতে সাহায্য করে।গর্ভাবস্থায় নিয়মিত হাঁটার পাশাপাশি সাঁতারও কাটতে হবে।

আপনি একজন সার্টিফাইড ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে আপনার গর্ভাবস্থার একটি রুটিন নিতে পারে ।

 গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ নিয়ে শেষ কথা

আমাদের আজকের আয়োজনে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়।গর্ভধারণের ১০টি লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এছাড়াও বাসায় বসে প্রেগনেন্সি টেস্ট,গর্ভকালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যা,খাবার ডায়েট, গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম সম্পর্কে আলোচনা করেছি।

FAQ- প্রশ্নোত্তর

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কতদিনে বোঝা যায়?

উত্তরঃ ৬ সপ্তাহ।

গর্ভবতী মহিলার লক্ষন গুলো কি?

উত্তরঃ মাসিক মিস হওয়া, শারীরিক তাপমাত্রা, ঘন ঘন প্রস্রাব, হঠাৎ মেজাজ খারাপ হওয়া, বমি বমি ভাব, স্তনের পরিবর্তন, অবসন্নবোধ, পেট ফুলে যাওয়া, স্পটিং ও সাদা স্রাব, খাবারে অনীহা।

গর্ভবতী মহিলাদের ডাক্তারের পরে অনুযায়ী কোন জাতীয় ঔষধ খাওয়ানো যেতে পারে?

উত্তরঃ আয়রন,ফলিক এসিড

গর্ভবতী অবস্থায় কোন কোন খাবার ডায়েটে রাখতে হবে?

উত্তরঃ জটিল শর্করা, শাক-সবজি ও ফলমূল,স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন, শস্য ও লিগিউমস, তরল এবং আয়রন জাতীয় খাবার।

গর্ভের শিশুর বৃদ্ধির জন্য গর্ভবতী মায়ের দৈনিক কত কিলোরি লাগবে?

উত্তরঃ ৩৪০- ৪৫০

গর্ভাবস্থায় নিচের কোন কাজগুলো করতে হবে?

উত্তরঃ হাঁটাহাঁটি, সাঁতার কাটা।

আপনার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু আর্টিকেলঃ

2 thoughts on “গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কতদিন পর বোঝা যায়। গর্ভবতী হওয়ার ১০টি লক্ষণ”

  1. Pingback: ক্রিয়েটিনিন কী? ক্রিয়েটিনিন কমানোর উপায় -

  2. Pingback: ফরম নাম্বর দিয়ে আইডি কার্ড বের করার নিয়ম ২০২৩ -

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top