কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো এই বিষয়ে আপনারা অনেকে জানতে চান। আজকের পোস্টে আমরা আপনাকে কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো, ক্রিয়েটিনিন কি?, কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো হয় ( ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা )?, কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়, কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়, কিডনি ভালো রাখার উপায়, এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। কিডনি মানুষের দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনির মাধ্যমে দেহ থেকে ক্ষতিকর বর্জ পদার্থ বেরিয়ে যায়। তাই আমাদের কিডনিতে হতে পারে এরকম বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করা উচিত। কারণ কিডনিতে কিছু হলে দেহের বর্জ্য পদার্থ বেরিয়ে আসবে না ফলে আমাদের দেহে আরোও অনেক রোগ ব্যাধি বাসা বাধবে। তাই আমাদের দেহে কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো এই বিষয়ে পরিষ্কার জ্ঞান রাখা উচিত।

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো
কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো

ক্রিয়েটিনিন কি?

মানবদেহের মাংসপেশির ক্রিয়েটিন ফসফেট ভেঙে ক্রিয়েটিনিন নামক উৎপাদের উদ্ভব ঘটে। মানবদেহে ক্রিয়েটিনিন এর পরিমাণের উপর কিডনির সুস্থতা নির্ভর করে। ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা নির্ধারণ করেই মুলত কিডনির সুস্থতা পরিমাপ করা হয় । ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় । ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কম বা বেশি হলে কিডনিতে সমস্যা আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো হয় চলুন দেখে নেই।

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো হয় ( ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা )?

১. একজন স্বাভাবিক পুরুষের ক্ষেত্রে শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা সাধারণত প্রতি ডেসিলিটারে ০.৬-১.২ মিলিগ্রাম হয়।

২. একজন স্বাভাবিক নারীর ক্ষেত্রে শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা সাধারণত প্রতি ডেসিলিটারে ০.৫-১.১ মিলিগ্রাম হয়।

৩. শিশুদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা স্বাভাবিক ভাবেই কম হয়। একটি স্বাভাবিক শিশুর শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা সাধারণত প্রতি ডেসিলিটারে ০.৩-০.৭ মিলিগ্রাম হয়ে থাকে।

৪. কিশোরদের ক্ষেত্রে এই মাত্রটি শিশুদের থেকে একটু বেশি হয়। একটি স্বাভাবিক কিশোরের শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা সাধারণত প্রতি ডেসিলিটারে ০.৫-১.০ মিলিগ্রাম হয়ে থাকে।

৫. আর যাদের কিডনি নেই বা দান করে দিয়েছে এমন ব্যক্তিদের দেহে প্রতি ডেসিলিটারে ১.৮ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্রিয়েটিনিন থাকতে পারে।

আশাকরি কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো হয় এই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। এছাড়া এটাও জেনে রাখুন যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ৫.০ mg/dL এর উর্ধ্বে গেলে তার কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছে হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

*mg/dL ক্রিয়েটিনিন পরিমাপের একক। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে μmol/L এককটি ব্যবহার করা হয়। এক mg/dL প্রায়  ৮৮.৪ μmol/L এর সমপরিমাণ।

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়

কিডনি মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ । কিডনি বিকল হলে দেহে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। কারন কিডনি দেহের অধিকাংশ বর্জ্য পদার্থ বের করে দেই। কিডনি যখন সমস্যা দেখা দেয় তখন রোগীকে বাচিয়ে রাখার জন্য  কিডনির ডায়ালাইসিস করতে হয়।

যখন কোন রোগীর কিডনি মাত্র 10% থেকে 15 % ঠিক থাকে তখন কিডনির ডায়ালাইসিস করতে হয় ।

কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়

কিডনি বিকল হয়ে গেলে আপনার দেহে কিছু অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা লক্ষন দেখতে পারবেন যার দ্বারা আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছে কি না। নিছে এমন কিছু লক্ষন নিয়ে আলোচনা করা হলো যেগুলো পরিলক্ষিত হলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছে এবং অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

১. ঘন ঘন প্রসাব

কিডনি বিকল হলে এই লক্ষনটি সবথেকে বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে কিছু সময় পরপর প্রসাবের বেগ আসে।

২. প্রসাবের পরিমাণ কম হওয়া

কিডনি বিকল হয়ে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই দেহ থেকে বর্জ্য পদার্থ কম বের হবে এবং বর্জ্য পদার্থ দেহে থেকে যাবে। তাই মুলত প্রসাবের পরিমাণ কম হয়।

৩. ফেনাযুক্ত প্রসাব

প্রসাবে ডিম ভাজার সময় যেরকম ফেনা দেখা যায় এমন ফেনা দেখা দিলে সেটি সাধারণত প্রোটিন ক্ষরণের জন্য হয়ে থাকে।

৪. প্রসাবে রক্ত

কিডনি বিকল হয়ে গেলে কিডনিতে থাকা ফিল্টার বা ছাকনির কোষ গুলো ড্যামেজ হয়ে যায় এবং তা প্রসাবের সাথে বেরিয়ে আসতে পারে যা অনেকটা রক্তের মতো দেখায়।

৫. প্রসাবের অন্যান্য পরিবর্তন

কিডনি বিকল হয়ে গেলে প্রসাবের গন্ধ, রং এবং ব্যথার পরিবর্তন পরিলক্ষিত হতে পারে। এমন হলে বুঝতে হবে কিডনিতে কোন সমস্যা আছে।

৬. বিভ্রান্তি

কিডনি বিকল হয়ে গেলে পর্যাপ্ত পরিমাণ বর্জ্য পদার্থ বের হয় না তাই একটু পরিশ্রমের ফলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। এছাড়া কোন বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে ব্যর্থ হওয়া অথবা চিন্তাধারার পরিবর্তন এগুলো হতে পারে।

৭. ক্লান্তি

কিডনি বিকল হলে যেহেতু ঘন ঘন ডিহাইড্রেশন হয় তাই ক্লান্তি হওয়াটা স্বাভাবিক। অর্থাৎ আপনি একটু পরিশ্রম করলেই ডিহাইড্রেশনের শিকার হবেন এবং ক্লান্ত অনুভব করবেন। এটি মুলত ডিহাইড্রেশনের প্রভাবে হয়ে থাকে। এছাড়া চিন্তাধারার পরিবর্তনের ফলে মেজাজ খিটখিটে থাকে ফলে ব্রেন সহজেই ক্লান্ত হয়ে যায়।

৮. বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া

কিডনি বিকল হওয়ার ফলে দেহে এবং রক্তে প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য পদার্থ জমা হয় যা দেহ বের করে দিতে চাই। তাই বমি বমি ভাব হওয়াটা স্বাভাবিক। এছাড়া কিডনির অন্যান্য উপশমের ক্ষেত্রেও এই লক্ষনটি দেখা যায়।

৯. অস্বাভাবিক শ্বাসকষ্ট

রক্তে প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য পদার্থ জমা হওয়ার ফলে ফুসফুসে পানি জমতে পারে এর কারনে ঠান্ডা লাগা সহ অস্বাভাবিক শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এটি কিডনি বিকল হওয়ার অন্যতম একটি লক্ষন।

এছাড়া কিডনি বিকল হয়ে গেলে আরোও সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে প্রসাবে অনেক পরিবর্তন লক্ষ করতে পারবেন।

কিডনি ভালো রাখার উপায়

কিডনি বিকল হওয়ার আগে আমরা কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে কিডনি ভালো রাখতে  পারি এই অংশে আমরা সেই বিষয়ে আলোচনা করবো।

১. প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন

পানি অতিরিক্ত পরিমাণে ক্রিয়েটিনিন তৈরি করতে বাধা প্রদান করে এবং দেহের অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। তাই দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। পানি পান করা কিডনির জন্য খুবই উপকারী।

২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন

নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে দেহের অতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। এছাড়া ব্যায়াম রক্তচাপ কমায়। রক্ত চাপের ফলে কিডনিতে অনেক সমস্যা হতে পারে তাই দৈনিক ব্যায়াম করুন।

৩. শর্করা জাতীয় খাবার কম খান

শর্করা দেহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। তবে অতিরিক্ত শর্করা কিডনিতে প্রচুর সমস্যা তৈরী করতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্ত চাপ যাদের আছে তাদের কখনো অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয়।

৪. যথাসম্ভব ব্যথার ঔষধ কম খান

ব্যথার ঔষধ বা পেইন কিলার কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যথাসম্ভব কম ব্যথার ঔষধ খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথার ঔষধ সেবন করুন।

৫. ধুমপান বন্ধ করুন

ধুমপান কিডনি সহ ফুসফুসের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। ধুমপানের প্রভাবে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অনেক বৃদ্ধি পায়। তাই ধুমপান যত সম্ভব কম করুন। অথবা সম্পূর্ণরুপে ধুমপান বন্ধ করে দিন।

৬. সুষম খাবার খান

কিডনির জন্য উপকারি এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। পটাশিয়াম যুক্ত খাবার কিডনির জন্য সবথেকে ভালো। তাই অতিরিক্ত পটাশিয়াম যুক্ত খাবার খান। শর্করা জাতীয় খাবার বিশেষ করে চিনি কম খান। শর্করা জাতীয় খাবার কিডনিতে প্রচুর সমস্যা তৈরী করে।

৭. পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম যেমন কিডনির জন্য ভালো তেমনি দেহের অন্যান্য অঙ্গের জন্যও ভালো। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম কিডনিতে সমস্যা তৈরি করতে পারে এমন অনেক রোগ থেকে রক্ষা করে। তাই দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান।

কিডনির পয়েন্ট নিয়ে শেষ কথা

কিডনি মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা আমাদের রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কিডনি বিকল হলে দেহে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিবে। কারন কিডনি দেহের অধিকাংশ বর্জ্য পদার্থ বের করে দেই। কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো হয় এই বিষয়েও আমাদের পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। এর ফলে আমরা চিকিৎসকের কাছে সঠিক তথ্য দিতে পারবো।

আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি থেকে আপনি কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো হয় এই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। কিডনি যেহেতু দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ তাই আমাদের এই বিষয়ে জ্ঞান রাখা অনেক জরুরী। এতে নিজের উপকার সহ পরিচিতজনদের উপকারে আপনি আসতে পারবেন। অতএব আজকের আর্টিকেলটি সংরক্ষণ করে রাখুন এবং এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন।

ধন্যবাদ!

3 thoughts on “কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো”

  1. Pingback: গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কতদিন পর বোঝা যায়। গর্ভবতী হওয়ার ১০টি লক্ষণ -

    1. স্বাভাবিক নারীদের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা থাকে ০.৫-১.১ মিলিগ্রাম। স্বাভাবিক পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসি লিটার রক্তে এর মান ০.৬-১.২ মিলিগ্রাম। একটা কিডনী যাদের নেই তাদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা প্রতি ডেসি লিটার রক্তে ১.৮ মিলিগ্রাম পর্যন্ত স্বাভাবিক।

  2. Pingback: ফরম নাম্বর দিয়ে আইডি কার্ড বের করার নিয়ম ২০২৩ -

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top